| |
               

মূল পাতা রাজনীতি ইসলামী দল দেশের রাজনীতি অস্থির হয়ে উঠেছে : চরমোনাই পীর 


দেশের রাজনীতি অস্থির হয়ে উঠেছে : চরমোনাই পীর 


রহমত নিউজ     04 November, 2022     05:07 PM    


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, এখানকার রাজনীতির ধরণ দেখলে মনে হয় দেশ প্রাকসভ্য পর্যায়ে রয়েছে। বিগত জাতীয় নির্বাচনসমূহ ভোট ডাকাতির মহোৎসব করে গণতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও দেশের রাজনীতি অস্থির হয়ে উঠেছে। প্রধান বিরোধী দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে রাজপথে মোকাবেলা করা হবে বলে বলা হচ্ছে। যা রাজনীতির শিষ্টারচার পরিপন্থি। 

আজ (৪ নভেম্বর) শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর গুলিস্তানস্থ কাজী বশির মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের জাতীয় সীরাত সম্মেলন, পুরস্কার বিতরণ, বিশ্বজয়ী হাফেজ-ক্বারীদের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। 

চরমোনাই পীর বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও দেশের মানুষ নাগরিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকার বঞ্চিত মানুষ এখনও অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করছে। ভাত ও ভোটের অধিকারের জন্য রাজপথে নেমে এসেছে মানুষ। দেশ এখন চরম সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। জাতীয় সম্পদের অপরিকল্পিত অপব্যবহারের মাধ্যমে চরম পর্যায়ের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মাধ্যমে দেশের শিল্প-কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। একই সমস্যাকে কেন্দ্র করে দিনদিন দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। নিম্নবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তের নাগরিকরাও জীবনধারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি সুন্নাহকে উপেক্ষা করে মানব রচিত বুর্জোয়া নীতি আদর্শের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজ করার কারণেই দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের এসব সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। সুন্নাহর আলোকে জাতীয় সম্পদের অপব্যবহার রোধের মাধ্যমে এসকল জাতীয় সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

তিনি বলেন, নববী আদর্শ বাদ দিয়ে মানব রচিত কুফরি মতবাদের অনুসরণ ও অনুকরণর কারণে দেশের সামগ্রিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ইসলামী অনুশাসন বাদ দিয়ে অন্য কোনো বুর্জোয়া মতবাদের প্রাধান্য দেয়া কখনোই বুদ্ধিমান শাসকদের কাজ হতে পারে না। যেখানেই শান্তির কথা আলোচনা হয়, সেখানেই শান্তির দূত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম চলে আসে। এজন্য অমুসলিমরাও বলে থাকেন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মুহাম্মদ সা. এর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, দেশ দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সরকার দলীয় নেতানেত্রীরা এবং প্রশাসনের লোকজন দুর্নীতিতে অকুণ্ঠ নিমজ্জিত। দেশের রিজার্ভ শুণ্যের কোঠায়। দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেওলিয়া হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমইে সহিংস ও অস্থির হয়ে উঠছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সর্বক্ষেত্রে নববী আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, সভ্য দেশের রাজনীতি এভাবে চলতে পারেনা বরং আইন-নিয়ম কানুন সংবিধান মেনে পারস্পরিক বোঝা পড়ার মাধ্যমেই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। বর্তমান সরকার দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গলাটিপে হত্যা করেছে। প্রশাসনকে নির্জীব আজ্ঞাবহ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বাঁচো-মরো পরিস্থিতিতে ফেলেছে। যা কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। এই অবস্থার পরিবর্তনে ক্ষমতাসীনদেরই প্রদান ভূমিকা নিতে হবে। আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও শান্তি পূর্ণ করতে হবে। সে জন্য সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।

চরমোনাই পীর বলেন, পরকালের নাজাতে ব্যক্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরআদর্শ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিন মুসলমানের কাজ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী অশান্তি, দুর্দশাগ্রস্ত জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হলে, সর্বক্ষেত্রে নববী আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসূলসাল্লাল্লাহুসালামের আদর্শই একমাত্র সমাধান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল মুসলমানদের নেতা ছিলেন না বরং তিনি সকল মানুষের নেতাছিলেন। সকলের স্বার্থ তিনি নিশ্চিত করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি বলেন কেউ যদি কোন অমুসলিমের সাথে অন্যায় আচরণ করে তাহলে তারবিরুদ্ধে কেয়ামতের দিন আমি নিজে আল্লাহর দরবারে বিচারের সুপারিশ করব।

সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে এবং কেএম শরীয়াতুল্লাহ ও মাওলানা জিয়াউল আশরাফের পরিচালনায় সীরাত সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন, জামিয়া রহমানিয়া অজিজিয়ার প্রধান মুফতী মুফতী হিফজুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মুফতী ওয়ালিউর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক ড. মুফতী রশীদ আহমদ ও ড. মাওলানা হুসাইনুল বান্না, সীরাত গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন, অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা আহমদ বদরুদ্দীন খান, ইবি অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা, সীরাত গবেষক মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী, কবি, লেখক গবেষক মাওলানা মুসা আল হাফিজ, কবি এমদাদুল হক, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, আতিকুর রহমান মুজাহিদ,  নুরুল করীম আকরাম, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মজুমদার, ডা. শহিদুল ইসলাম, মুফতী শেখ সাইফুল ইসলাম। সীরাত সম্মেলনে ৭দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন মুফতী শেখ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- ১. বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী এবং সর্বোচ্চ সম্মানীয় ব্যক্তি। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় তা সংযুক্ত করতে হবে। ২. মহান আল্লাহ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলাম অবমাননা রোধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৩. খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং কাদিয়ানীদের পণ্য সর্বোতভাবে বর্জন করতে হবে। ৪. জাতীয় জীবনের সর্বত্র সীরাত চর্চা ব্যাপকতর করার লক্ষে “জাতীয় সীরাত একাডেমী প্রতিষ্ঠা এবং সীরাত পদক” চালু করতে হবে। ৫. জাতীয় শিক্ষাক্রমের সকল স্তরে সীরাত পাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অনার্স কোর্সে সীরাতকে আলাদা বিষয়ের মর্যাদা দিতে হবে। ৬. সাধারণ শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে “কুরআন শিক্ষা” বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ লক্ষে বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষাদানের জন্য “ক্বারী” নিয়োগ করতে হবে। ০৭. আজকের জাতীয় সীরাত সম্মেলন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট কওমি মাদরাসায় সীরাত পাঠ ব্যাপক করতে এবং স্বতন্ত্র “সীরাত গবেষণা বিভাগ” প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানাচ্ছে।

জাতীয় সীরাত সম্মেলন তিনটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। ১ম পর্ব সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। প্রধান অতিথির বক্তব্য, বিশ্বজয়ী হাফেজদের সম্মাননা প্রদান এবং পুরস্কার বিতরণ। ২য় পর্বে সম্মানিত অতিথিদের বক্তব্য এবং ৩য় পর্বে মনোজ্ঞ ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধার পর থেকে জাতীয় সীরাতুন্নবী সা. মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে রাসূলের সা.এর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন সম্মানিত অতিথিবৃন্দ।